রণেশ দাশগুপ্ত ও তাঁর সাংবাদিক জীবনের একটি ছায়াচিত্র: দীপংকর গৌতম

‘কেঁচোর মায়ের পুত্রশোক থাকে মাত্র একদিন। গরুর মায়ের আরেকটু বেশি। এই বেশি কম হয় শুধুমাত্র ঘিলুর তারতম্যের কারণে।’ -শম্ভু মিত্র
ঘিলুর এই তারতম্য শুধু কেঁচো এবং গরুর ক্ষেত্রে নয়Ñমানুষের বেলায়ও এ পার্থক্য ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। এ ক্ষেত্রে কারো নিদর্শন টেনে বললে ঘটনাটা তেতো হয়ে যায়। ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ নামে যে প্রবাদটি রয়েছে-এখানে সেটি প্রযোজ্য। তবে এ গীত গাওয়া হচ্ছিল সাংবাদিক-সাহিত্যিক রণেশ দাশগুপ্তের সাংবাদিক জীবন সম্বন্ধে কিছু বলার জন্য।
একটা সংবাদপত্র মানে একটা উপাসনালয়। একজন সাংবাদিক সেই উপাসনালয়ের উপাসক। ভারতীয় মিথলজিতে দেখা যায় সাপের দেবী মনসাকে চাঁদ সওদাগর উপাসনা করতে চায়নি। কিন্তু এবং একজন সাংবাদিক সত্যকে সেজদা করে। যদি সেই সাংবাদিক কোকিলের মতো ফড়িয়া না হয়, বাদুড়ের মতো জার্সি বদল না করে, একমুখে দুই কাজ না সারে। সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার এটাই মূল কথা। এই সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে পেশার দেয়াল টপকে যিনি ব্রতের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি রণেশ দাশগুপ্ত্ সাহিত্য, সাংবাদিকতা কিংবা সংস্কৃতির পাঠ-এস ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক ব্রতচারী ঋষি। রণেশ দাশগুপ্তের তুলনা দ্বিতীয় আর কাউকে দিয়ে দেয়া যাবে না। সংবাদপত্রের জগতে তিনি ছিলেন এক আদমসুরত বা দিকচিহ্ন। একজন সাংবাদিকের জীবন গঠনের জন্য রণেশ দাশগুপ্ত এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। Continue reading রণেশ দাশগুপ্ত ও তাঁর সাংবাদিক জীবনের একটি ছায়াচিত্র: দীপংকর গৌতম

রণেশ দাশগুপ্তর সাহিত্য-বিষয়ক ভাবনা ও মূল্যায়ন: সৌমিত্র শেখর

সদাপ্রত্যক্ষ এই জীবনযাপনের বাইরেও তো মানুষের আরো একটি জগৎ থাকে- ভাবনার পরিমণ্ডল! এখানে কিন্তু অন্যের হাত সামান্য, এর স্বয়ম্ভু বিশ্বকর্মা সে নিজেই; ওই মানুষটি। তিনি যদি হন শিল্পী অথবা কোনো এক মহান আদর্শে বুক বেঁধে জীবনের সিঁড়ি ভেঙে সামনে এগিয়ে যাওয়া প্রত্যয়ী ধীমান- তাঁর ক্ষেত্রে এ জগৎটি আরও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। রণেশ দাশগুপ্তর ক্ষেত্রেও ঘটেছে ঠিক এ-রকম একটা কিছু। তিনি একাধারে ছিলেন সাংবাদিক, তাত্ত্বিক-রাজনীতিক, সৎ-সংগঠক, সাহিত্যবোদ্ধা ও সমালোচক। বহুক্ষেত্র-বিচরিত মানুষ হলেও তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপের আত্মপ্রণোদনার উৎস কিন্তু চিন্তার নির্দিষ্টতা থেকে, আদর্শের নিগূঢ় অআন্তঃপ্রেরণায়। সে-অর্থে ‘সাহিত্যশিল্পী’ হয়তো তিনি নন, তবে সাহিত্য-বিবেচক নিশ্চয়। এ বিবেচনা কোনো বৃশ্চিক-বিষ্ঠাজাত নয়; নিজস্ব চিন্তনের উর্বর ভূমিতেই প্রোথিত এর মূল- রসের অমিত উৎস যেখানে দ্বান্দ্বিক বন্তুবাদী দর্শন। শুদ্ধতর অর্থে বাংলাসাহিত্যচিন্তার প্রকাশটা বঙ্কিমচন্দ্র থেকেই শুরু,- রবীন্দ্রনাথে সৌন্দর্য, মনুষ্যত্ব আর ব্যাপকতার প্রতিষ্ঠা। প্রমথ চৌধুরী-বুদ্ধদেব বসু-আবু সয়ীদ আইয়ুব প্রমুখ একে নিয়ে এলেন বিকাশশীলতার মোহনায়, ব্যক্তি-জিজ্ঞাসার অম্বুজে। এরপর এই সাহিত্যচিন্তার দিকটি বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলো আমাদের বোধে। Continue reading রণেশ দাশগুপ্তর সাহিত্য-বিষয়ক ভাবনা ও মূল্যায়ন: সৌমিত্র শেখর

তরুণদের নিয়ে রণেশদা’র ভাবনা: কাজী মোহাম্মদ শীশ

বিংশ শতাব্দীর একজন অসাধারণ মানুষ রণেশ দাশগুপ্ত। আমাদের সকলের রণেশদা। সেই মানুষটির সাথে পরিচিত হওয়ার তাগিদে তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। বহুমাত্রিকতার ধারক পূর্ণাঙ্গ মানুষটাকে নিজের মধ্যে ধারণ করার ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়। হয়তো সে কারণে তার জীবনের নানা দিক নিয়ে পৃথক পৃথকভাবে নানা জনের নানাভাবে উপস্থাপনার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। তরুণদের নিয়ে রণেশদার ভাবনার দিকগুলো অবতারণা করার প্রচেষ্টা নিতে বলা হয়েছে আমাকে। রণেশদার রাজনৈতিক-দার্শনিক চিন্তা, সাহিত্য ভাবনা, সাংস্কৃতিক দিক অথবা সাংবাদিক জীবন কিংবা তরুণদের নিয়ে ভাবনা এমনকি জীবন যাপনের ধারা একের সঙ্গে অন্যটি মিলেমিশে আছে। আর তাই সমগ্র মানুষটাকে উপলব্ধি করার জন্য এক অঙ্গের আলোচনায় অন্য অঙ্গের আবির্ভাব অনিবার্য। Continue reading তরুণদের নিয়ে রণেশদা’র ভাবনা: কাজী মোহাম্মদ শীশ

রণেশ দাশগুপ্তের সংস্কৃতি চেতনা: অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী

প্রথমেই বলে দিতে চাই, রণেশ দাশগুপ্ত (১৯১২-১৯৯৭) কেবল একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। আর সেই প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে অনেকগুলো কামরা। প্রতিটি কামরাই আপন আপন সম্পদে সমৃদ্ধ।
তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে অনেকেই তাঁকে ঋষি বলেছেন। ত্যাগ, সৎসাহস, ধৈর্য, প্রজ্ঞা আর সৃষ্টিশীলতা ঋষিদের বৈশিষ্ট্য। রণেশ দাশগুপ্তের চরিত্রে এ সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। তাই তিনি ঋষি। তাঁর আদর্শ-নিষ্ঠা, আদর্শ প্রকাশে তাঁর অনুচ্চ কিন্তু দৃঢ় উচ্চারণ তাঁর প্রতিপক্ষকেও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধান্বিত করে তুলেছে।
আর এ-সকল এসেছে তাঁর জীবনদর্শন থেকে। সেই জীবনদর্শন থেকেই গড়ে উঠেছে তাঁর সংস্কৃতি চেতনা। Continue reading রণেশ দাশগুপ্তের সংস্কৃতি চেতনা: অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী

রণেশ দাশগুপ্তের চিন্তার দিগন্ত: যতীন সরকার

এক
পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝিতে যখন আমি কলেজের ছাত্র, তখন থেকেই রণেশদাশগুপ্তের লেখার সঙ্গে আমার পরিচয়। কঠিন কঠিন লেখার অনেক কিছুই তখন বুঝতাম না যদিও, তবু তাঁর লেখা আমাকে ভীষণভাবে টানত। বারবার পড়তাম। পড়তে পড়তেই কঠিনের প্রতি একটা ভালোলাগা জন্মে গিয়েছিল। কঠিন লেখার এই লেখকটিকে দেখবার ও তাঁর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে জেগেছিল তখনই। কিন্তু সে-ইচ্ছা পূরণ হতে লেগেছিল দীর্ঘদিন। একে তো আমি একজন মফস্বলবাসী নিরীহ ছাত্র- ঢাকায় গিয়ে এত বড় মাপের একজন মানুষের সঙ্গে দেখা করার মতো সাহসই সঞ্চয় করে উঠতে পারিনি- তার উপর ওই মানুষটির দেখা পাওয়াও তখন খুব সহজ ছিল না। কারণ, কারা প্রাচীরের বাইরে খোলা হওয়ায় তিনি খুব কম সময়ের জন্যই অবস্থান করতে পারতেন।
তার সঙ্গে আমার প্রথম প্রত্যক্ষ পরিচয় হয় আটষট্টিতে। Continue reading রণেশ দাশগুপ্তের চিন্তার দিগন্ত: যতীন সরকার