“আমরা পার্টিতে এসেছিলাম গান করার জন্য নয়, বিপ্লব করার জন্য” -হেমাঙ্গ বিশ্বাস :জাকির তালুকদার

রেললাইনের পূর্ব পাশে বিহারি-কালোনির পরের চত্বরেই শেকলঘেরা কুড়িফুট উঁচু শিবলিঙ্গের সদৃশ সাদা চুনকাম করা সিমেন্টের গায়ে আলকাতরা-কালো কালিতে ‘ঈমান-একতা-শৃঙ্খলা’ লেখা জিন্নাস্মারক থেকে শুরু হয়ে মোটামুটি সরলরেখার মতো আয়ুব খানের উন্নয়ন-দশকে বানানো ষাটফুটি সড়কটিই আমাদের লোকালয়ের রাজপথ। এলোপাথারি গড়ে ওঠা জমাটি রিক্সাস্ট্যান্ড আর একঘোড়ার প্রায় উচ্ছন্নের পথে যাওয়া টমটমস্ট্যান্ডের সামনে-পেছনে ভাতের হোটেল, হোলসেল ওষুধের দোকানগুলোর সারি, জুটমিলের পাটক্রয়কেন্দ্র, মারোয়াড়িদের ডাল-খোল-ভূষির গুদাম এবং গদি দেখতে দেখতে পূর্ব দিকে এগিয়ে চলে সড়ক। তারপর জেলার সবচেয়ে বড় কলেজ, টুকটাক কিছু অফিস-দোকান, আর নোয়াখালিপাড়ার কসাইদের গোস্তের দোকান দেখা পাওয়া যায় শহরের প্রাণকেন্দ্রের সিনেমা হলের আগপর্যন্ত। তারপরেই বাসস্ট্যান্ড পেরুলেই আবার ফাঁকা ফাঁকা কয়েকটা দালানকোঠা ছাড়া মাদ্রাসা মোড়ের আগে আর জমজমাট কোনো জনসমাবেশ পাওয়া যাবে না। ঢাকার বিক্রমপুর আর কুমিল্লা থেকে আসা বাস্তুহারাদের পাড়া কাছেই বলে মাদ্রাসা মোড়কে আমাদের শহরের আদি বাসিন্দারা কেউ কেউ তাচ্ছিল্যের সাথে ডাকে ঢাকাইয়া মোড় বলে। তো এই পর্যন্ত এসেই নিজের বিস্তারের দৈর্ঘ্যরে সমাপ্তি ঘোষণা করেছে আমাদের আড়াই কিলোমিটারের ছোট্ট রাজপথ। সেই রাজপথ দখলের সংগ্রামে সম্মুখ সারিতে দেখেছি আমাদের জনপদের সবচেয়ে মেধাবী তরুণদের, উজ্জ্বল যুবাদের আর জনপদে সবচেয়ে সৎ এবং প্রাজ্ঞ বলে পরিচিত বয়স্কদের। হতাশার নব্বই দশকের আগ পর্যন্ত তাদের দখলেই ছিল আমাদের রাজপথ। আর সেই রাজপথ দখলের সংগ্রামে যেসব হাতিয়ার ছিল তাদের হাতে, সেগুলির মধ্যে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গানগুলি ছিল একাগ্নি বানের মতোই অন্যতম প্রধান আয়ুধ। Continue reading “আমরা পার্টিতে এসেছিলাম গান করার জন্য নয়, বিপ্লব করার জন্য” -হেমাঙ্গ বিশ্বাস :জাকির তালুকদার

সমাজতন্ত্র ও সংস্কৃতি: আন্তনিয়ো গ্রামসি তর্জমা: তাহমিদাল জামি

বিশ শতকের সবচেয়ে মৌলিক ও অন্তর্ভেদী চিন্তাবিদের নাম আন্তনিয়ো গ্রামসি। শুধু তাই নয়, মৌলিকতায় ও অন্তদৃষ্টিতে তাঁর স্থান কার্ল মার্কস, জিকমুন্ট ফ্রয়েড ও ভ¬াদিমির লেনিনের কাতারে। কি উন্নত পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে কি সামাজ্যবাদের কবলগ্রস্ত অনুন্নত দেশে সংস্কৃতি, ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য ও সর্বহারা শ্রমিক কৃষকের সংগ্রামকে হৃদয়ঙ্গম করিতে গ্রামসি অপরিহার্য। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে গ্রামসি চর্চার বালাই নাই। গত বছর আহমদ ছফা বিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত গ্রামসি উৎসব চলাকালে মহাত্মার এই রচনাখানি তর্জমা করা হয়। গ্রামসির এই রচনা প্রথম প্রকাশিত হয়’I1Grido del Popolo পত্রিকায়, ১৯১৬ সালের ২৯ জানুয়ারি তারিখে। তর্জমার জন্য ব্যবহৃত প্রবন্ধটির উৎস: The Gramsci Reader: Selected Writings ১৯১৬-১৯৩৫, David Forgass (New York: NY Press, 2000).

মূল প্রবন্ধ: সম্প্রতি এনরিকো লেওনের একখানি প্রবন্ধ আমাদের নজরে এসেছে। Continue reading সমাজতন্ত্র ও সংস্কৃতি: আন্তনিয়ো গ্রামসি তর্জমা: তাহমিদাল জামি

মৃত্যুর এই উপত্যাকা আমাদের দেশ না :দীপংকর গৌতম

প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলতে বেশ কিছুদিন ধরে দেশে সংখ্যালঘু শ্রেণীর উপর যে ধরনের বর্বরতা চালানো হচ্ছে তাকে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ বললে বিষয়টা অনেক ভদ্রোচিত বাংলায় ব্যাখ্যা দেয়া হয় বলে আমার ধারণা। সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে সম্প্রদায় শব্দটি যুক্ত। সম্প্রদায়ের সঙ্গে কোনো না কোনো ধর্ম চিন্তার একটি গোষ্ঠী যুক্ত। আমাদের দেশে রামু থেকে শুরু করে পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একদল সহিংস দুর্বৃত্ত যে নারকীয়তা চালাচ্ছে তাকে আমরা কোনোমতেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলতে পারি না। কারণ কোন সম্প্রদায় সংগঠিতভাবে এই হামলার সঙ্গে নির্দিষ্টভাবে যুক্ত এ কথা বলার অবকাশ নেই।
রামুতে বা চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর যে নারকীয়তা চলছে তার সঙ্গে কারা যুক্ত তা পরবর্তীতেই জানা গেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এত পলেস্তরা পড়ে গেছে যে, এ বিষয় নিয়ে তেমন ঝামেলা বাড়াতে পারেনি কেউ। এর অপরাধীরা কে কোন দল করে পরে সবই সরকার এবং সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জানা। তারপরও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোন নজির আজ অবধি সরকার রাখতে পারেনি। দেশের সুশীল সমাজও এ ব্যাপার নিয়ে অতোটা তৎপর নয়। কারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর এতবেশি হামলা ইতিপূর্বে হয়েছে যে এর কোন বিচার না হওয়ার জন্য বিষয়টি গা সওয়া হয়ে গেছে। Continue reading মৃত্যুর এই উপত্যাকা আমাদের দেশ না :দীপংকর গৌতম

বর্ষা ও বাঙালি :প্রদীপ ঘোষ

সমুদ্র আর পাহাড়ের, সবুজ সমতলের জমাট বাধা পলির বুকে কবে কোন কালে হেঁটেছিলো আদি মানবেরা। নাতিশীতোষ্ণ জলহাওয়ায় সবুজের বুকে ফলিয়েছিলো শস্যদানা। সেই সকল আদিমানবেরা একটু একটু করে প্রকৃতিকে সাজিয়েছে নিজের মত করে, গড়ে তুলেছিলো প্রকৃতিক সংস্কৃতি। বলছি সেই সকল মানুষদের কথা যারা এ জনপদের প্রকৃতিক সংস্কৃতি বিনির্মাণ করেছিলো। কালক্রমে একে একে বাইরে থেকে এলো নানা রক্তের ধারা। কখনো আদি অষ্ট্রিক, মঙ্গলীয় জনধারা, ইন্দো আর্য, পারস্য শক, পাঠান মোঘল সহ নানা জাতি। এই বিচিত্র মেলামেশার ফলে কালক্রমে বাঙ্গালির নিজস্ব এক গড়ন আমরা পেয়েছি। সেই সাথে পেয়েছি চাষাবাদের মত কৃষি সভ্যতা। ষড় ঋতুর অপার স্নেহে এই কৃষিই আমাদের দিয়েছে উর্বর এক সংস্কৃতি যার নাম বাঙ্গালি সংকৃতি। Continue reading বর্ষা ও বাঙালি :প্রদীপ ঘোষ

তেরো সংখ্যা কি অশুভের প্রতীক? মযহারুল ইসলাম বাবলা

১৩ সংখ্যাকে অশুভরূপে কম-বেশী আমরা সবাই ভেবে থাকি। কেবল আমরা একা নই। বিশ্বের প্রায় দেশেই ১৩ সংখ্যাকে আন লাকি থার্টিন রূপে বিবেচনা করা হয়। পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকেই বিষয়টি আমাদের উপমহাদেশে চল হয়েছে। প্রতিটি নতুন বছরের আগমনে আমরা নানা প্রত্যাশা করে থাকি। চলতি বছর শুরুতেও আমাদের নানা প্রত্যাশা নিশ্চয় ছিল। কিন্তু বছরের দ্বিতীয় মাস হতে আমরা যা প্রত্যক্ষ করেছি-তাতে ঐ অশুভের প্রতীক রূপেই ২০১৩-কে বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছি। কাকতালীয়ভাবে হলেও ২০১৩ আমাদের জাতীয় জীবনে শুভবার্তা নিয়ে আসেনি। একমাত্র প্রত্যাশা পূরণ বা সাফল্য বলতে স্বাধীনতার দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর পর হলেও ঘৃণিত কতিপয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় প্রদান জাতির কলঙ্ক মোচনের পথ উন্মুক্ত করেছে। আমাদের প্রত্যাশা পূরণে এছাড়া আর কোনো ক্ষেত্রে সাফল্যের দেখা আমরা পাই নি। Continue reading তেরো সংখ্যা কি অশুভের প্রতীক? মযহারুল ইসলাম বাবলা