আমার শিশু মনের তিন কবি: কাজী মোহাম্মদ শীশ

এই পরিণত বয়সেও সুকান্ত-নজরুল-রবীন্দ্রনাথ এই তিন কবিকে নিয়ে যখনই নাড়াচাড়া করি তখনই আমার শিশু মনে গেঁথে থাকা কিছু শব্দ, কিছু কথা, কিছু ছন্দ, কিছু তরঙ্গ নিরন্তর বহে চলে অন্তর জুড়ে। আমার অনুভূতিতে তোলে এমন সব ঢেউ যা ভাষায় রূপ দেওয়ার সাধ্য আমার নেই। কেমন করে কোথা থেকে শুর করবো বুঝে উঠতে পারি না। খুঁজতে চেষ্টা করি শিশু কালের সেই সময়টাকে। কখনো মনে হয় খুঁজে পেয়েছি। কখনো মনে হয় সব কিছু থেকে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। পারিবারিক কারণে কিনা জানি না পারিপার্শ্বিক প্রভাবে হয়তো বা, নতুবা তখনকার আর্থসামাজিক অবস্থা, পাড়া মহল্লার সংবদ্ধতা সবটা মিলিয়ে আরো অনেকের মতো আমাকেও বিশেষ কিছু পড়াশোনা করার আগেই এই তিন কবির সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছিল। তিনজনই মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল আমার শিশু মনে। দিনে দিনে এই কবির সাথে আমার বন্ধুত্বকে প্রগাঢ় করে তুলেছিল আরও কিছু কবি-গীতিকার-নাট্যকার-গায়কের কবিতা গান-নাটক। সে সব গান-কবিতা-নাটক আমার রক্তের সাথে মিশে গিয়ে মন জগতে কী এক বিস্ময়কর অনির্বচনীয় আনন্দধারা সৃষ্টি করে চলেছে অবিরত। বড় ইচ্ছে করে ছেলেবেলার সেই ছেলেমানুষির কিছুটা ভাগ বর্তমান শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। ভাবি আমার সেই ছেলেবেলা যদি বার বার ফিরে আসতো প্রথমে মনে পড়ে গানের কথা। তখনও স্কুলে যাওয়া শুর হয় নাই। ছাপার অক্ষরে পড়ার অনেক আগেই পিন লাগানো দম দেওয়া গ্রামোফোন যন্ত্রে
‘রানার রানার’ গানটি শুনে ডাক হরকরার কঠিন-করুণ জীবনের ছবি শিশু মনে গভীর রেখাপাত করে। তখন কিন্তু এ গানের পরই আর একটি রেকর্ড অবশ্যই শুনতে হয়েছে। শুনতে হয়েছে কোন এক গাঁয়ের বধূর সরল-সুন্দর-সুখী জীবনের করুণ সমাপ্তির কথা কোন এক গাঁয়ের বধূর গানটি। কেন সুকান্তের পর সলিল চৌধুরীর গান অপরিহার্যভাবে শোনার বাসনা জেগেছে সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার প্রয়োজন হয় নাই। কোথায় কীভাবে রানার গানের শেষ অংশ; Continue reading আমার শিশু মনের তিন কবি: কাজী মোহাম্মদ শীশ

সংস্কৃতিই গণঐক্যের বলিষ্ঠ হাতিয়ার: কামাল লোহানী

সাংস্কতিক উত্তরাধিকারই যে আমাদের গর্ব, ইতিহাস তাই নয়, আমরাও তো চলমান ইতিহাসের নায়ক, সৃষ্টি করে চলেছি নবনব অধ্যায়, নতুন কোন শত্রু“র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের পাকিস্তানী কায়েমী স্বার্থবাদী উপনিবেশিক শত্রু“, সমান্তবাদ, সাম্প্রদায়িকতাবাদ নানা শোষকশ্রেণী ও গণবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়েছি । এ লড়াইয়ে আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন প্রধানত: এ দেশীয় কৃষক তথা মেহনতি মানুষ এবং সচেতন নাগরিক সমাজ। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগ্রামে গণমানুষের অগ্রগামী অংশই ছিলেন নিপীড়িত, নির্য্যাতিত জনগোষ্ঠী। এদেশীয় সামন্তপ্রভূরা শাসকশ্রেণীর লেজুড়বৃত্তি করে নিজেদের আখের গোছাবার লক্ষ্যে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শোষক গোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টাই করে গেছে। ফলে ওদের ভূমিকা সব সময়ই গণবিরোধী ছিল এবং থেকেও গেছে। আর তেমনি ভারতের প্রথম স্বাধীনতা মযদ্ধ- সেই ১৮৫৭ সালে যেমন সাধারণ সিপাহীরা বিদ্রোহ করেছিলেন সাম্রাজ্যবাদী কপটতা ও সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি প্রয়োগের বিরুদ্ধে ঐক্যের সাহসে, তেমনি দ্বিতীয় সহাযুদ্দ শেষে যখন ঐ বৃটিশ বেনিয়া-সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত বাংলায় অকল্পনীয় দূর্ভিক্ষ- ছিয়াত্তর বাংলা সনের মানুষ্যসৃষ্ট মন্বন্তর সৃষ্টি করেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের গণশক্তিকে দূর্বল এবং বিভক্ত করতে, তখনই সাম্রাজ্যলোভী বিলেতী পরাশক্তিই বিদায় ঘন্টা যেন বেজে উঠেছিল। Continue reading সংস্কৃতিই গণঐক্যের বলিষ্ঠ হাতিয়ার: কামাল লোহানী

গণসংস্কৃতিই পারে জনগণকে একত্রিত করতে : কামাল লোহানী

সংস্কৃতি যেমন মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশ তেমনি কিন্তু সংগ্রামেরও ইতিহাস। আবেগ না থাকলে যেমন মানুষ হয় না তেমনি মানুষের লড়াই-ই একদিন চূড়ান্ত পরিনতিতে আবেগের পূর্ণতা এনে দেয়। এ আবেগ আদর্শের। যার উপর মানুষ আস্থা স্থাপন করতে পারেন। সংস্কৃতি মানুষের যুদ্ধের হাতিয়ার। সে যুদ্ধ সমাজকে কলুষমুক্ত করে। পরিশীলিত স্বপ্নকে সুন্দর আর কল্যাণের অভিযাত্রাকে সফল করে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে দেশকে সুখী সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তোলে। আমরা তো সেই চমৎতার ভাবষ্যতকে স্বপ্ন দেখে নিজেদের সংগঠিত করি এবং সাহসী হই শেণীবৈষম্যের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ভেঙে সমাজতান্ত্রিক কাঠামোকে আলিঙ্গন করতে কাণে আমরা পূর্বপুরুষ থেকে শিক্ষা পেয়েছে লড়েই অধিকার আাদায় করে নিতে হয়। দেশতো পরাধীনতার শৃংখল ভেঙে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদকে বিতাড়িত করেছিল সাবধীনতার প্রথম যুদ্ধজয়ে কিন্তু সাম্রাাজ্যবাদঅ কুচক্রান্তেও ফাঁকে ফেলে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দিয়ে গেল এবয় ভারত ভূমিকে বিভক্ত কওে হিন্দুস্থান-পাকিস্তার বানিয়ে রেখে চলে গেল। পূর্বপুরুষের গৌরবোজ্জল ঐতিহ্য অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও পারস্পারিক সম্প্রীতির মূল্যবোথকে চিনসংঘর্ষেও কুৎসিত এবং ভয়াবহ পরিনতির দিকে ঠেলে দিয়ে গেল। বাংণার মানুষের হাজার বছরের এতিহ্য-ইতিগাসকে কলুষিত করার সমাজে ও সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করার এ অপকৌশল অন্ততঃ আমাদেও পূর্ববঙ্গে বাঁধার সম্মুখীন হলো সাধারন মানুষের সচেতনতায়। Continue reading গণসংস্কৃতিই পারে জনগণকে একত্রিত করতে : কামাল লোহানী

সংখ্যালঘু নিপীড়ন, চলমান রাজনীতি ও ভবিষ্যতের আশা : যতীন সরকার

আমি হিন্দু। হিন্দু পরিবারে জন্ম নিয়েছি বলেই আমি হিন্দু। অর্থাৎ এটি আমার ইচ্ছানিরপেক্ষ বাস্তবতা। তাই এই হিন্দুত্ব নিয়ে আমার কোনো গর্বও নেই, গ্লানিও নেই। হিন্দু হওয়ার জন্য পুরস্কার বা তিরস্কার কোনোটাই আমার প্রাপ্য বলে আমি মনে করি না। অথচ কী আশ্চর্য, প্রতি মুহূর্তেই এই হিন্দুত্বের দায় আমাকে বহন করতে হয়।

না। জীবনে আমি কোনো দিন সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হইনি। তেমনটি যাতে আমাকে না হতে হয়, তার জন্যই বরং আমার শুভানুধ্যায়ীরা সর্বদা তৎপর থেকেছেন। তবু আমি যে হিন্দু সে কথা স্মরণ রাখতে আমাকে প্রতিনিয়তই বাধ্য করা হয়। শুধু শত্রুরাই নয়, বন্ধুরাও আমার হিন্দু পরিচয়টি সর্বদা মনে করিয়ে দেয়। শত্রুরা তেমনটি করে ভীতি প্রদর্শনের জন্য, বন্ধুরা করে আমার প্রতি প্রীতির বশে। এ রকম ভীতি ও প্রীতিই আমার অন্য সব পরিচয়কে ছাপিয়ে আমার হিন্দু পরিচয়কে প্রধান করে তোলে।
Continue reading সংখ্যালঘু নিপীড়ন, চলমান রাজনীতি ও ভবিষ্যতের আশা : যতীন সরকার

গণসংগীতের স্বরূপ-সন্ধান: যতীন সরকার

বাংলাদেশের গণসংগীত: বিষয় ও সুরবৈচিত্র্য তরুণ গবেষক সাইম রানার বইটির শীর্ষনামেই এর পরিচয় পরস্ফুিট হয়ে উঠেছে। এ দেশের মনন সাহিত্যে এই বাণীসাধকের অভ্যুদয়কে আমি সর্বান্তঃকরণে অভিনন্দন জানাই।

বইটির ‘মুখবন্ধ’র প্রথম অনুচ্ছেদেই তিনি লিখেছেন, “…অস্ত্রই একমাত্র প্রতিরোধের ভাষা হতে পারে না। যে-কোনো সৃজন, মনন, সাধন কিংবা তান্ত্রিক জ্ঞান দিয়েও প্রতিরোধ করা সম্ভব জগতের যত পঙ্কিলতা। তা গানে হোক, দেহভঙ্গিমায় কিংবা ইশারা-ইঙ্গিতে হোক, চিত্রে বা ফসলের আবাদে হোক—নিষ্পেষিত মানুষেরা যুগে যুগে, কালে কালে কখনোই ঠগেত বসে থাকেনি। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ব্যাপ্তি সংস্কৃতির ভিতর দিয়ে বিকশিত হয়েছে। বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন ‘চর্যাপদ’ কিংবা লোকগীতি ‘ভাওয়াইয়া’, লোকনাট্য ‘গম্ভীরা’, তেমনি একেকটি জনপদের অধিকারের ভাষা। গণসংগীতও বিংশ শতাব্দীর অভিনব এক শিল্পদর্শন, যা সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ শোষকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ জাগরণের প্রতিষ্ঠিত আঙ্গিক হিসেবে মূল্যায়নযোগ্য।” Continue reading গণসংগীতের স্বরূপ-সন্ধান: যতীন সরকার