চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু, নাটোরের ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ এবং ঝিনাইদহের পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সকল হত্যাকা-ের সুষ্ঠু এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সাম্প্রতিক সকল হত্যাকা-ের প্রতিবাদ এবং সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে ০৮ জুন বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় শাহবাগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ আহবান জানান উদীচী এবং সমমনা বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশের শুরুতে ‘লালমনিরহাট থেকে কাপাসিয়া’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন বাচিক শিল্পী ঝর্ণা সরকার। এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্ত, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন প্রিন্স, প্রকৌশলী নিমাই গাঙ্গুলী, সংস্কৃতি কর্মী অলোক বসু, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান সাগর, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াদ, শ্রমিক নেতা আব্দুল্লাহ আল কাফী রতন, উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম ও অমিত রঞ্জন দে, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার প্রমূখ। এছাড়া, সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সম্পাদকম-লীর সদস্য সুরাইয়া পারভীন। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশে আজ এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ব্লগার, শিক্ষক, পুরোহিত, মুয়াজ্জিন, দর্জি, ব্যবসায়ীসহ সমাজের প্রায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ একের পর এক শিকার হচ্ছেন নির্মম হত্যাকা-ের। সবশেষ গত কয়েকদিনে হত্যা করা হয়েছে চট্টগ্রামের সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু, নাটোরের ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ এবং ঝিনাইদহে পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে। এর আগে, হত্যা করা হয়েছে মুক্তমনা মানুষ এবং শিক্ষকসহ প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনাসম্পন্ন মানুষকে। হত্যাকারীদের টার্গেট থেকে বাদ যায়নি কোন ধরনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকা মানুষও। পরিকল্পিতভাবে একই কায়দায় একের পর এক হত্যাকা- ঘটানো হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেগুলোকে ততোটা গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে না। বারবার এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে হত্যাকারীদের প্রকারান্তরে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে পারে না। তারা আরো বলেন, দেশকে উগ্র গোষ্ঠীর হাত থেকে বাঁচাতে হলে চাই সামাজিক-সাংস্কৃতিক জাগরণ। চাই, সমাজের সকল স্তরের মানুষের সমন্বিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সারাদেশে টার্গেট কিলিং, হত্যার অরাজক পরিস্থিতিকে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানও জানান সমাবেশের বক্তারা। বিক্ষোভ সমাবেশে নিরাপত্তাহীনতার বাতাবরণ ভেঙ্গে মানুষের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় ঘটানো এবং হত্যাকা-ের বিচার নিশ্চিত করতে চাপ সৃষ্টি করার জন্য সমাজের সব স্তরের মানুষকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানানো হয়। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা মহানগর সংসদ এবং এর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন শাখা সংসদের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন সমমনা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ছাত্র-যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন।