ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারী সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘বেগম’-এর সম্পাদক, নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নূরজাহান বেগম-এর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এক শোক বার্তায় উদীচী’র কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী ও প্রবীর সরদার বলেন, কিংবদন্তি এ সাংবাদিকের মৃত্যুতে এ উপমহাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো। বাংলার নারী জাগরণ এবং নারী শিক্ষার অন্যতম অগ্রদূত নূর জাহান বেগম। ১৯২৫ সালের ০৪ জুন জন্ম নেয়া নূর জাহান বেগম তাঁর বাবা, বিখ্যাত ‘সওগাত’ পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চায় আগ্রহী হন। ১৯৪৬ সালে কলকাতার নূর জাহান বেগম লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। শৈশবেই তিনি কাজী নজরুল ইসলাম, আবুল মনসুর আহমদ, কাজী মোতাহার হোসেন, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, ইব্রাহীম খাঁ প্রমূখ প্রখ্যাত লেখকদের সান্নিধ্যে আসার সুবাদে তাঁর সাহিত্যবোধ আরো সমৃদ্ধ হয়।
এরপর ১৯৪৭ সালে ‘বেগম’ পত্রিকা প্রকাশ শুরু হলে বেগম সুফিয়া কামালের সাথে মিলে এর সম্পাদনার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। কয়েক মাস পর থেকেই তিনি এককভাবে ‘বেগম’-এর সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। দীর্ঘ ছয় দশক সফলতার সাথে ‘বেগম’ সম্পাদনা করেন নূর জাহান বেগম। ওই পত্রিকায় শুধুমাত্র নারীরাই লিখতেন। তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে জাহানারা ইমাম, সাবেরা আহসান ডলি, রোকেয়া রহমান কবির, বিজলি নাগ প্রমূখ উলে¬খযোগ্য। নূর জাহান বেগম বাংলাদেশের নারীদেরকে সাংবাদিকতা জগতে আসার জন্য অন্যতম অনুপ্রেরণাদায়ী ছিলেন বলে শোকবার্তায় মন্তব্য করেন উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তিনি সবসময়ই নারী জাগরণ, নতুন লেখক সৃষ্টি, সাহিত্য ও সৃজনশীলতায় নারীদেরকে উৎসাহিত করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগে ২৩ মে সোমবার সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে মারা যান নূর জাহান বেগম। এই মহীয়সী নারীর মৃত্যুতে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন উদীচী’র কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।