সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী গোষ্ঠীর মূলোৎপাটন দাবি
সাম্প্রদায়িক, জঙ্গি, মোৗলবাদী গোষ্ঠীর মূলোৎপাটনের দাবি জানিয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নেত্রকোনা বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয়ে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ঘৃণ্য হামলায় প্রাণ হারান উদীচী’র তৎকালীন সহ-সাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সংগঠন বিষয়ক সম্পাদক সুদীপ্তা পাল শেলীসহ আটজন। সেই নৃশংসতম হামলার ৯ম বর্ষপূর্তির দিনে নিহতদের স্মরণে গত ৮ ডিসেম্বর সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় “প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান”।
“সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ, উপড়ে ফেলো বিষদাঁত”- এই শ্লোগান নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে “মুক্তির মন্দির সোপান তলে” গানটি দলীয়ভাবে পরিবেশন করে উদীচী’র শিল্পীরা। এরপর সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা মহানগর সংসদসহ বিভিন্ন শাখা ও সংসদের নেতারা। এছাড়াও, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরসহ কয়েকটি সমমনা প্রগতিশীল সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল্লাহেল কাফি রতন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান সাগর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, উদীচীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদারসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তারা বলেন, ৭১’র পরাজিত শক্তি আবারো বাংলাদেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বর্তমানে কিছুটা চাপে থাকলেও মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিগোষ্ঠী নানাভাবে তাদের অপকৌশল প্রয়োগে সচেষ্ট রয়েছে। তাদের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার উৎস বন্ধ করতে না পারলে এদেশকে আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য তাদের যে অপচেষ্টা তা রোখা কঠিন হবে। তবে, এদেশের প্রগতিশীল জনতা সেই চেষ্টা কখনোই সফল হতে দেবে না বলে মন্তব্য করেন তারা।
সন্ধ্যায় শহীদ বেদিতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন উপস্থিত সবাই। এরপর দলীয় সঙ্গীত, আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। দলীয় সঙ্গীতের মধ্যে ছিল “আমার প্রতিবাদের ভাষা”, “আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে”, “লাখো লাখো হাত ভেঙ্গেছে আজকে ভীরুতা ক্ষীণ” প্রভৃতি গান। এছাড়া, একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক মোল্লা।
২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে নেত্রকোনায় উদীচী কার্যালয়ের লাগোয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন শতদল গোষ্ঠীর কার্যালয়ে একটি বোমা পড়ে থাকতে দেখে এক পথচারী। বিষয়টি জানাজানি হলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি খাজা হায়দার হোসেন এবং সুদীপ্তা পাল শেলীসহ উদীচী’র নেতৃবৃন্দও ভীড় করেন ঘটনাটি দেখতে। এর ঘন্টাখানেক পর সাইকেল আরোহী এক যুবক নিরাপত্তা বেস্টনী পেরিয়ে উদীচী নেতৃবৃন্দের কাছাকাছি পৌঁছেই তার সাইকেলে বহন করে আনা বোমা বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটালে মারা যান উদীচী’র সহ-সাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেনসহ সাতজন। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন নয়জন পুলিশ সদস্য এবং উদীচী’র বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীসহ অন্তত ৬০ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মারা যান সুদীপ্তা পাল শেলী।