গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার ঢাকা জেলা পর্ব সম্পন্ন হলো

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত ষষ্ঠ সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা’২০১৫-এর ঢাকা জেলা পর্ব সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গত ০৭ মার্চ বিকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গীত ও নৃত্যকলা ভবনের ১০৫ নং মহড়া কক্ষে আয়োজিত হয় এ প্রতিযোগিতা। ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ ও দলীয়- এই চারটি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। একক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে অনুর্ধ্ব-১২ বছর বয়সীরা ‘ক’ বিভাগে, অনুর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সীরা ‘খ’ বিভাগে এবং ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকল প্রতিযোগী ‘গ’ বিভাগের অন্তর্ভূক্ত থাকবেন। দলীয় প্রতিযোগিতা (‘ঘ’ বিভাগ)-এর ক্ষেত্রে কমপক্ষে চারজন শিল্পীর অংশগ্রহণ বাঞ্ছনীয় ছিল। জেলা পর্বের বিজয়ীরা আগামী ১৭ মার্চ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন। সারাদেশের সকল জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভাগীয় পর্যায়ের বিজয়ীরা আগামী ২৭ মার্চ সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেন-এর জন্মদিনকে উপলক্ষ করে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় উদীচী আয়োজিত এবারের উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভারতের বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার। এছাড়াও, দু’দিনব্যাপী উৎসবে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ সমরে অনুপ্রেরণা দেয়া ১০ জন কণ্ঠসৈনিককে উদীচীর পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানো হবে। গণসঙ্গীতের প্রচার, প্রসার এবং একে একটি স্বতন্ত্র সঙ্গীতের ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রতিবছর গণসঙ্গীত উৎসব আয়োজন করে উদীচী। এবারের সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা’২০১৫ প্রতিযোগিতার শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- “পথে পথে মিছিলের প্রতিরোধ, জনতার ঐক্যকে গড়েছি”।

প্রগতিশীল গণচেতনা সম্পন্ন জাগরণমূলক গান, শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের দু:খ-দুর্দশা এবং অধিকার সম্পন্ন সচেতনতামূলক গান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ গান, স্বাধীনতা সংগ্রামের গান, সমাজের অন্যায় অত্যাচার নিপীড়ন অবসানের দিক নির্দেশনামূলক গান, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান, যুদ্ধবিরোধী-স্বৈরাচার বিরোধী গান, সা¤্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদ বিরোধী গান, বিশ্ব শান্তির পক্ষে গান, শোষণের বিরুদ্ধে গান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গানকে গণসঙ্গীত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সহিংসতার বিরুদ্ধে রচিত ও সুরারোপিত নতুন গণসঙ্গীতসমূহ বেশি গুরুত্ব পাবে। স্থান-কাল ভেদে গণসঙ্গীতের ভিন্নতর ব্যাখ্যা থাকলেও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে উল্লিখিত বিষয়গুলোকে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এদিকে, গত ১৩ মার্চ শুক্রবার বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগর সংসদের প্রচার বিভাগের আয়োজনে দিনব্যাপী প্রচার বিষয়ক কর্মশালা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টায় উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত কর্মশালার উদ্বোধন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি শংকর সাওজাল। সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সভাপতি নিবাস দে। উদ্বোধনী পর্বের পরই শুরু হয় আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। শুরুতে প্রশিক্ষণ দেন উদীচী’র কেন্দ্রীয় প্রচার বিষয়ক সম্পাদক কংকন নাগ, এরপর দ্বিতীয় পর্বে প্রশিক্ষণ দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য হাসান মাহমুদ। আর, তৃতীয় পর্বের প্রশিক্ষক ছিলেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রহমান মুফিজ। দিনব্যাপী প্রশিক্ষণে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি লেখন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার এবং মাঠ পর্যায়ের প্রচার (যেমনঃ দেয়াল লিখন, পোস্টার লিখন প্রভৃতি) বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। উদীচী’র ঢাকাস্থ বিভিন্ন জেলা সংসদ এবং ঢাকা মহানগরের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন শাখা সংসদের নেতা-কর্মীরা প্রশিক্ষণে অংশ নেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.